‘তাজমহল, লালকেল্লা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে না কেন?’
ইমামা খাতুন
- আপডেট :
২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, শনিবার
- / 10
পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো হতাশ কিংবদন্তি বলিউড অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ। জানিয়ে দিলেন, এখন যা সব ঘটে চলেছে তা আর তাঁকে ক্ষুব্ধ করে না। বরং এখন এই হাস্যকর বিষয়গুলি থেকে ‘আনন্দপান’। তাজমহল, লালকেল্লাও যদি এখন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তা হলেও হয়তো তিনি আর কষ্ট পাবেন না। বরং ‘ইতিহাস-অজ্ঞ’দের সেই তাণ্ডব দেখে তিনি ‘আনন্দ’ই পাবেন।
বর্ষীয়ান এই অভিনেতা পরোক্ষভাবে এটাই স্পষ্ট করে দিলেন, এখন আর ক্ষোভ, অসন্তোষ দেখিয়ে কোনও লাভ নেই। বর্তমান শাসক শ্রেণি এসবে গুরুত্বই দেয় না। অতীতে বিরোধী মতকে গুরুত্ব দেওয়া হত। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। শাহ মনে করেন, দেশে সুষ্ঠু বিতর্কের অবকাশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তাই যারা তাঁর মতের বিরোধিতা করতে অভ্যস্ত তারা কখনও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারবে না। যুক্তি ও তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাসের অনুপস্থিতিতে যা বিকাশ লাভ করে তা হল-ঘৃণা ও বিভ্রান্তি। সে কারণেই দেশের একটি অংশ (গেরুয়া গোষ্ঠী) এখন অতীতকে বিশেষ করে মুঘল সাম্রাজ্যকে দোষারোপ করছে। তবে এসবে এখন আর তিনি রাগান্বিত হন না, বরং আনন্দপান।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রীরা নাগাড়ে মুঘল যুগকে নিন্দিত করে চলেছেন। ‘মুঘল-যুগের’ নামকরণের স্মৃতিবিজড়িত ৪০টি জায়গার নাম পাল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ভবনের ঐতিহাসিক মুঘল গার্ডেনের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। দেশের ইতিহাসকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
মেরুকরণের এই সময়ে শাহ অভিনীত ‘তাজ’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেতে চলেছে। সেখানে শাহকে সম্রাট আকবরের চরিত্রে দেখানো হয়েছে। এই ওয়েব সিরিজ নিয়ে কথা বলতে গিয়েই সাংবাদিকরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও মুঘল যুগ সম্পর্কে শাহকে প্রশ্ন করেন। সাংবাদিকরা শাহর কাছে জানতে চান, তিনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন যেখানে বলা হচ্ছে মুঘল জমানায় সমস্ত কিছুই ভুল ছিল? প্রত্যুত্তোরে শাহ স্পষ্ট করে দেন, এই হাস্যকর বিষয়গুলি তাঁকে মজা দেয়।
মুঘলরা এখানে লুট করতে আসেননি। তাঁরা এই দেশকে নিজেদের করে নিয়েছিলেন। এই দেশকে তাঁরা নিজেদের ঘর-বাড়ি ভেবেছিলেন। মুঘলদের অবদান অস্বীকার করতে পারে কে? যারা বলছে, মুঘলদের সবকিছু খারাপ ছিল তা দেশের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতাকে প্রকাশ করে। শাহর পালটা প্রশ্ন, ‘যদি মুঘল সম্রাটরা এতটাই পৈশাচিক ছিলেন, তাহলে যারা এর বিরোধিতা করছে তারা কেন মুঘল নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভগুলির চিহ্ন মুছে দিচ্ছে না?
মুঘলরা যা করেছে সবই যদি ভয়ঙ্কর হয়, তাহলে তাজমহল ভেঙে ফেলুন, লালকেল্লা ভেঙে দিন, কুতুব মিনার ভেঙে দিন?’ এখন যেভাবে মহিশূর সম্রাট টিপু সুলতানের কুৎসা করা হচ্ছে তা নিয়ে শাহ বলেন, ‘‘ইংরেজদের তাড়াতে আত্মবলিদান দেওয়া একজন মানুষ টিপু সুলতান। (আর এখন বলা হচ্ছে), ‘আপনি কি টিপু সুলতান চান নাকি রাম মন্দির চান?’ মানে, এটা কী ধরনের যুক্তি?’’