BREAKING:
বাজারে আসছে ১০০, ২০০ টাকার নোট, তবে আদলে কোনও বদল হবে না জানিয়েছে আরবিআই Rabindra Sarobar-এ দোল উৎসবের অনুমতি শহরে ফের ট্রলি ব্যাগ থেকে দেহ উদ্ধার, পুলিশি তৎপরতায় গ্রেফতার ২    সমাজসেবার জন্য সম্মানিত সংগীতশিল্পী অভিনেত্রী সুপর্ণা কুমার  কেন ‘ইন্ডিয়া’ বলব? প্রশ্ন আরএসএস নেতার, নাম বদলের দাবি সংঘের ২৬-এর ভোটে বাংলায় প্রার্থী দেবে AIMIM, শুরু সদস্য সংগ্রহ অভিযান রেশন ব্যবস্থায় কেন্দ্রের নয়া বিধি, ১ এপ্রিল দিল্লিতে পার্লামেন্ট অভিযান ডিলার্স ফেডারেশনের বাংলাকে ভাগ করবেন না: শুভেন্দুর ‘চ্যাংদোলা’ মন্তব্যে সরব মুখ্যমন্ত্রী Breaking: পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা, সন্ত্রাসবাদীদের হাতে বন্দি ১০০ যাত্রী জঞ্জালে ভর্তি, অকেজো টয়লেট: দিল্লিগামী বিমান বাতিল নিয়ে বিবৃতি সংস্থার

WOMENS DAY: ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান

রিপোর্টার:
  • শেষ আপডেট: শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫
WOMENS DAY: ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান

মুহাম্মদ উসমান গনী: মানুষ সামাজিক জীব, অন্যদিকে প্রকৃতির অংশ। তাই মানুষকে জীবন ধারণ, বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় বিধানই মেনে চলতে হবে। প্রাকৃতিক বিধান লঙ্ঘন করলে ধ্বংস অনিবার্য। আর সামাজিক বিধান ভঙ্গ করলে নেমে আসে বিপর্যয়। সামাজিক নিয়মগুলি প্রকৃতি থেকে মানুষের লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে ওঠে। বিধানসমূহের মধ্যে ধর্মীয় বিধানই শ্রেয়।

ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটি ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এছাড়া পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।

নারীর শিক্ষা: নারীদের তালিম তালবিয়ার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা নিসা, আয়াত: ১৯)  মহানবী সা. ঘোষণা করেন: ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষা-সহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ্তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি (সা.) আরও বলেন,  ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরয (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন-ইবনে মাজাহ শরিফ) তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

নারীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা: একইভাবে আধ্যাত্মিক মহিমা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর কর্তব্য রয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এ কথা সুনিশ্চিত, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকা দানকারী, রোযা পালনকারী, নিজেদের সম্ভ্রমের হেফাজতকারী এবং আল্লাহ্কে বেশি বেশি স্মরণকারী, আল্লাহ্ তাদের জন্য মাগফিরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।’ (সূরা আহজাব, আয়াত: ৩৫)

মা হিসেবে নারীর সম্মান: ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী সা. বলেন,  ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন,  ‘আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে?’ নবীজি সা. বললেন , ‘তোমার মা।’ ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারপর  কে?’ তিনি (সা.) উত্তর দিলেন,  ‘তোমার মা।’ ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারপর কে?’ এবারও তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, ‘তোমার মা।’ (বুখারি)।

মহানবী সা.-এর জামানার বিখ্যাত এক ঘটনার কথা আমরা জানি। মায়ের সেবা করার কারণে হযরত ওয়াইস করনি রা. প্রিয় নবী সা.-এর জামানায় থেকেও সাহাবি হতে পারেননি। একবার হযরত ওয়াইস করনি রা. নবীজি সা.-এর কাছে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সা.! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি?’

নবীজি সা. উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি।’ নবীজি সা. তাঁর গায়ের একটি মোবারক জুব্বা ওয়াইস করনির জন্য রেখে যান। তিনি(সা.) বলেন, ‘মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি।

আমার ইন্তেকালের পরে তাঁকে আমার এই জুব্বাটি উপহার দেবে।’ জুব্বাটি রেখে যান হযরত উমার রা.-এর কাছে এবং প্রিয় নবী সা. বলেন , হে উমার! ওয়াইস করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।’ কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান, মহানবী সা. বলেছেনn ‘মেয়ে শিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।

হাদিস শরিফে আরও আছে,  ‘যার তিনটি, দু’টি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সেই ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’

আরও পড়ুন: রমযান: হৃদয় পরিবর্তনের বরকতময় এক মাস

বোন হিসেবে নারীর সম্মানঃ মহানবী সা. বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনও কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ্ প্রাচুর্য দান করেন।

স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ১৮৭)  স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সা.  বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ) তিনি (সা.) আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা নিসা, আয়াত: ১৯) পবিত্র কুরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২২৮)

বিধবার অধিকার ও সম্মানঃ বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী সা. বলেছেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাযী ও সদা রোযা পালনকারী।’ (বুখারী, মুসলিম)

নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ব্যক্তিত্বের প্রমাণ: রাসূল সা.-এর একটি হাদিসে এসেছে, ‘নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবী করিম সা.-এর জীবনে লক্ষণীয় ছিল; ১. নামাযের প্রতি অনুরাগ; ২. ফুলের প্রতি ভালোবাসা; তিন. নারীর প্রতি সম্মান।’ (বুখারী, মুসলিম)

পবিত্র কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত বিখ্যাত নারীগণ: পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বহু বিখ্যাত নারীর উল্লেখ রয়েছে, তাঁরা নিজ নিজ অবস্থানে সেরা ছিলেন। যেমন- জগন্মাতা মা হাওয়া আ., আদমকন্যা হযরত আকলিমা, ইব্রাহীম আ.-এর পত্নী সারা, হযরত ইসমাইল আ.-এর মাতা হাজেরা, মিশরপতির স্ত্রী জুলায়খা, সুলাইমানের পত্নী সাবার রানি বিলকিস, ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আসিয়া, হযরত আইয়ুব আ.-এর স্ত্রী বিবি রহিমা, ইমরানের স্ত্রী হান্না, হযরত ঈসা আ.-এর মাতা বিবি মরিয়ম, নবী করিম হযরত মুহাম্মদ সা.-এর মাতা আমেনা ও দুধমাতা হালিমা সাদিয়া; উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রা., হযরত হাফসা রা., হযরত আয়িশা রা., মারিয়া রা.-সহ নবী-পত্নীগণ; নবীনন্দিনী রুকাইয়া, জয়নব, কুলসুম ও হযরত ফাতিমা রা.; আবু বকরের কন্যা আসমা, শহিদা সুমাইয়া ও নবীজি সা.-এর দুধবোন সায়েমা।

নারী তাঁর নারীত্বের মর্যাদা বজায় রেখেই সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন ও রাখছেন। নারী ছাড়া অন্য কেউই মাতৃত্বের সেবা ও সহধর্মিণীর গঠনমূলক সহযোগী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়। মায়েদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। মায়েরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি তথা পরিবারের প্রশান্তির উৎস।

 

এই সংক্রান্ত আরও খবর
Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.
Developed By eTech Builder