১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুকারবার্গের বিচার শুরু, হারাতে পারেন ইনস্টা-হোয়াটসঅ্যাপ

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
  • / 27

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার শুরু হয়েছে। মামলার ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের ভবিষ্যৎ মালিকানা। হারলে জুকারবার্গকে তাঁর কোম্পানি মেটা থেকে এই দুটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিক্রি করে দিতে হতে পারে।

মামলাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। তাদের অভিযোগ, জুকারবার্গ ফেসবুকের মাধ্যমে বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে চেয়েছেন এবং সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সময় থাকতে অধিগ্রহণ করে তাঁদের প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ নষ্ট করেছেন।

২০১২ সালে মাত্র ১৩ কর্মীর একটি ছোট স্টার্টআপ ইনস্টাগ্রামকে ১ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে ফেসবুক। আবার ২০১৪ সালে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপকেও কিনে নেয় ১৯ বিলিয়ন ডলারে। এই দুই অধিগ্রহণ নিয়েই আজ প্রশ্ন উঠেছে আদালতে।

এফটিসি এর আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ফেসবুক প্রতিযোগিতাকে ভয় পেয়েই এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিনে নিয়েছে। একটি অভ্যন্তরীণ ই-মেইলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইনস্টাগ্রাম সম্পর্কে জুকারবার্গ বলেছিলেন, ‘তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে কেনা অনেক সহজ।’

শুধু ইনস্টাগ্রাম নয়, একই কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপকেও প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় ফেসবুক। FTC-এর মতে, এটি বিশ্বাসভঙ্গ এবং মার্কিন প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের শামিল।

মেটার পক্ষে আইনজীবী মার্ক হ্যানসেন আদালতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে একটি সফল প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করা বেআইনি নয়। এটি একটি বৈধ ও কৌশলগত ব্যবসায়িক পদক্ষেপ ছিল।’

তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি কেবল ব্যবসায়িক কৌশল নয়, বরং বাজার দখলের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রুখে দেওয়ার এক বড় পরিকল্পনার অংশ ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাজারে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ আজ মেটার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। বর্তমানে ইনস্টাগ্রামের সক্রিয় ব্যবহারকারী ২০০ কোটির বেশি, এবং হোয়াটসঅ্যাপও বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

মামলার প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে মার্কিন রাজনীতির প্রসঙ্গও। জানা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জুকারবার্গ তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালান। তিনি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অর্থসাহায্য দেন, এবং ওয়াশিংটনে ২৩ মিলিয়ন ডলারে একটি বিলাসবহুল ম্যানশন কেনেন, যা অনেকেই মনে করেন, ছিল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশল। ধারণা করা হচ্ছিল, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে FTC হয়তো এই মামলা থেকে পিছু হটবে। কিন্তু তেমনটি না হওয়ায় এখন জুকারবার্গকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছে।

আদালতের এই মামলায় সাক্ষ্য দেবেন জুকারবার্গের সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শেরিল স্যান্ডবার্গসহ প্রযুক্তি জগতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। পুরো বিচার প্রক্রিয়া অন্তত আট সপ্তাহ চলতে পারে বলে জানা গেছে।

যদি আদালত এফটিসি এর পক্ষে রায় দেয়, তবে মেটাকে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করতে হবে, যা মেটার জন্য এক বড় ধাক্কা হবে এবং প্রযুক্তি জগতে এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জুকারবার্গের বিচার শুরু, হারাতে পারেন ইনস্টা-হোয়াটসঅ্যাপ

আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার শুরু হয়েছে। মামলার ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের ভবিষ্যৎ মালিকানা। হারলে জুকারবার্গকে তাঁর কোম্পানি মেটা থেকে এই দুটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিক্রি করে দিতে হতে পারে।

মামলাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। তাদের অভিযোগ, জুকারবার্গ ফেসবুকের মাধ্যমে বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে চেয়েছেন এবং সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সময় থাকতে অধিগ্রহণ করে তাঁদের প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ নষ্ট করেছেন।

২০১২ সালে মাত্র ১৩ কর্মীর একটি ছোট স্টার্টআপ ইনস্টাগ্রামকে ১ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে ফেসবুক। আবার ২০১৪ সালে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপকেও কিনে নেয় ১৯ বিলিয়ন ডলারে। এই দুই অধিগ্রহণ নিয়েই আজ প্রশ্ন উঠেছে আদালতে।

এফটিসি এর আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ফেসবুক প্রতিযোগিতাকে ভয় পেয়েই এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিনে নিয়েছে। একটি অভ্যন্তরীণ ই-মেইলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইনস্টাগ্রাম সম্পর্কে জুকারবার্গ বলেছিলেন, ‘তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে কেনা অনেক সহজ।’

শুধু ইনস্টাগ্রাম নয়, একই কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপকেও প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় ফেসবুক। FTC-এর মতে, এটি বিশ্বাসভঙ্গ এবং মার্কিন প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের শামিল।

মেটার পক্ষে আইনজীবী মার্ক হ্যানসেন আদালতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে একটি সফল প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করা বেআইনি নয়। এটি একটি বৈধ ও কৌশলগত ব্যবসায়িক পদক্ষেপ ছিল।’

তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি কেবল ব্যবসায়িক কৌশল নয়, বরং বাজার দখলের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রুখে দেওয়ার এক বড় পরিকল্পনার অংশ ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাজারে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ আজ মেটার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। বর্তমানে ইনস্টাগ্রামের সক্রিয় ব্যবহারকারী ২০০ কোটির বেশি, এবং হোয়াটসঅ্যাপও বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

মামলার প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে মার্কিন রাজনীতির প্রসঙ্গও। জানা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জুকারবার্গ তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালান। তিনি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অর্থসাহায্য দেন, এবং ওয়াশিংটনে ২৩ মিলিয়ন ডলারে একটি বিলাসবহুল ম্যানশন কেনেন, যা অনেকেই মনে করেন, ছিল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশল। ধারণা করা হচ্ছিল, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে FTC হয়তো এই মামলা থেকে পিছু হটবে। কিন্তু তেমনটি না হওয়ায় এখন জুকারবার্গকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছে।

আদালতের এই মামলায় সাক্ষ্য দেবেন জুকারবার্গের সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শেরিল স্যান্ডবার্গসহ প্রযুক্তি জগতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। পুরো বিচার প্রক্রিয়া অন্তত আট সপ্তাহ চলতে পারে বলে জানা গেছে।

যদি আদালত এফটিসি এর পক্ষে রায় দেয়, তবে মেটাকে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করতে হবে, যা মেটার জন্য এক বড় ধাক্কা হবে এবং প্রযুক্তি জগতে এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে।